প্রতিকী ছবি
নির্বাচনে বারবার নৌকার বিপক্ষে অবস্থান ও মাদ্রাসা-কবরস্থানের জমি গোপনে বিক্রিসহ নানা অভিযোগ সত্ত্বেও রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন সোহরাব আলী। বিতর্কিত এই নেতা সভাপতি হয়েও নৌকার পক্ষে কাজ করায় দলীয় নেতাকর্মীদের পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার রাত ৮টার দিকে সোহরাব আলীর নেতৃত্বে তাদের ওপর এই হামলা করা হয় বলে জানা গেছে। সোহরাব আলী ছাড়াও হামলায় অংশ নেন- তার ছোটভাই আসাদুল ও কামরুল, ছেলে সৌমিক, সহযোগী সম্রাট ও হাবিবসহ কয়েকজন।
আহতরা হলেন- রাজশাহী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ গালিব (৩৪), তার বাবা পারিলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হেলাল তালুকদার (৬৫) ও পবা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জহুরুল ইসলাম চঞ্চল (৩৫)। আহতদের রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আহত আসাদুল্লাহ গালিব বলেন, আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান ও ছাত্র অবস্থা থেকেই দলের প্রতি ভালোবাসা থেকে সব সময় নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। এতে শুরু থেকেই আমাদের পরিবারের প্রতি ক্ষোভ ছিল সোহরাবের। ফলে পারিলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে হারানোর পর আমার ওপর আগেও একবার হামলার চেষ্টা করা হয়। এবার সভাপতি হওয়ার তিন দিনের মাথায় আওয়ামী লীগের অফিসে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করলেন। খবর পেয়ে পারিলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের টানা ১৩ বছর সভাপতির দায়িত্বে থাকা আমার বাবা প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল তালুকদার সেখানে উপস্থিত হলে তাকেও পিটিয়ে জখম করা হয়।
আসাদুল্লাহ গালিব জানান, কবরস্থানের জমি গোপনে অন্যের কাছে বিক্রির সময় স্থানীয় জনগণের তোপের মুখে পড়ার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সেই সময় তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হয়। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর টাকা নিয়ে শোধ না করার ঘটনা খুব স্বাভাবিক বিষয় তার কাছে। কয়েক বছরের মধ্যে সামান্য ব্যবসায়ী থেকে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ করেছেন সোহরাব আলী।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বারবার অদৃশ্য কারণে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেন পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব আলী। এতে এই ইউনিয়নে পরপর দুবার নৌকা প্রতীক পেয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাহিমা বেগম। সবশেষ নির্বাচনেও সোহরাব ছিলেন দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে। নির্বাচনে নৌকা পরাজিত হয়। বিদ্রোহী প্রার্থীই জয়ী হন। এতে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারও হন সোহরাব আলী।
এছাড়া মাদ্রাসা-কবরস্থানের জমি গোপনে বিক্রি, স্থানীয় সমস্যা সমাধানের নামে ও চাকরির প্রলোভনে টাকা আদায়সহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি। সেই প্রভাবে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে এবার প্রার্থীও হয়েছিলেন সোহরাব। কিন্তু নানা বিতর্কের কারণে পদে আসতে পারেননি তিনি।
পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেও যেন বিতর্কিত নেতা সোহরাব পদ না পান এজন্য সংবাদ সম্মেলন করেন ওই ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাহিমা বেগম। এছাড়া স্থানীয় ত্যাগী নেতারাও পারিলায় স্বচ্ছ ও দলের প্রতি আন্তরিক ব্যক্তিকে নেতৃত্বে আনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবুও গত ১৯ জুন পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সোহরাব হোসেনই সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। পদ পেয়েই দলীয় নেতাদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে সোহরাব আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে এ বিষয়ে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। এ ব্যাপারে সোহরাব আলীকে বলা হয়েছে। তাকে সতর্ক করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের মারধর করে সোহরাব আলী ঠিক কাজ করেননি।
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, আসাদুল্লাহ গালিব বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপন দেশ ডটকম/ আবা





































